Hot News
- Advertisement -
Ad imageAd image

আজ থেকে দীঘা: বাংলার নবতীর্থভূমি

সোমবার দুপুরে দীঘার সমুদ্রতীরে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো, যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরীর জগন্নাথ সেবক ও ইস্কনের সাধুদের সঙ্গে নিয়ে দীঘার জগন্নাথ মন্দির পরিদর্শন করলেন। মন্দির চত্বরে মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে চলমান হোমযজ্ঞের পবিত্র পরিবেশে তিনি যজ্ঞবেদির চারপাশ ঘুরে দেখেন এবং মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দীঘার সমুদ্রতীরে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটে। এই জগন্নাথ মন্দির এখন থেকে তাদের মন কাড়বে। এখানে আধ্যাত্মিকতা ও সম্প্রীতির অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে।”

দীঘা এখন আর শুধু পর্যটনের স্বর্গরাজ্য নয়, ভারতের মানচিত্রে এক নতুন তীর্থস্থান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। এই মন্দিরের মাধ্যমে বঙ্গ ও উৎকলের (ওড়িশা) সামাজিক-সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। স্বাধীনতার পর এমন স্থাপত্যের নজির পশ্চিমবঙ্গে বিরল বলে অনেকেই মনে করছেন। মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বারে তিনটি পিরামিডাকৃতি গোপুরম রয়েছে, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় দ্বারের উচ্চতা ১০ মিটার এবং পাশের দুটির উচ্চতা সাড়ে ৮ মিটার। মন্দিরে মোট ১২টি স্তম্ভ রয়েছে, প্রতিটিতে ৫৬টি করে প্রদীপ জ্বালানো হবে। এভাবে মোট ৬৭২টি প্রদীপের আলোয় মন্দির প্রাঙ্গণ উদ্ভাসিত হবে। মন্দিরের নয়টি অংশ—গোপুরকম (সিংহ দুয়ার), পদ্মকুণ্ড, ভোগমণ্ডপ, নাটমন্দির, জগমোহন, ভীমানা ও গোপুরম (ব্যাঘ্র দুয়ার)—এর প্রতিটি অংশই স্থাপত্যের অপরূপ নিদর্শন।

মুখ্যমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছিলেন, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মতো এখানেও প্রতিদিন পতাকা পরিবর্তনের রীতি পালিত হবে। পুরীর পতাকা পরিবর্তনের দায়িত্বে থাকা পরিবারগুলো থেকে একটি দল এই কাজের জন্য দীঘায় এসেছে। মন্দিরের চূড়ায় উঠতে তিনটি স্তরে মোট ২৩৬টি সিঁড়ি পেরোতে হয়—প্রথম স্তরে ১০২টি, দ্বিতীয় স্তরে ৬৫টি এবং তৃতীয় স্তরে ৬৯টি। ভীমানার গর্ভগৃহে প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি রয়েছে। এই গর্ভগৃহের উচ্চতা ৬৫ মিটার, যা পুরীর মন্দিরের সমান। গর্ভগৃহের মধ্যে রত্নবেদি মন্দিরের পবিত্রতাকে আরও মহিমান্বিত করেছে।

উদ্বোধনের প্রাক্কালে মন্দির প্রাঙ্গণ আলোকমালায় সজ্জিত হয়েছে। সন্ধ্যার পর দীঘার আকাশ আলোর রোশনাইয়ে ঝলমল করছে। মাঙ্গলিক সানাইয়ের সুর দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। নিউ দীঘা থেকে ওল্ড দীঘা পর্যন্ত মাইকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দীঘা বাইপাস থেকে ১১৬বি জাতীয় সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ব্যারিকেড ও নাকা চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে। উদয়পুরের আন্তঃরাজ্য সীমানায় ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কোলাঘাট, পাঁশকুড়া, ময়না, এগরাসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোলাঘাট থেকে দীঘা পর্যন্ত সড়কে জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের ফ্লেক্স ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে।

এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যসহ রাজ্যের শীর্ষ আমলারা উপস্থিত রয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে মহাযজ্ঞ শুরু হবে এবং বুধবার প্রভু জগন্নাথের প্রাণপ্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই মন্দির পূর্ণাঙ্গ তীর্থস্থানে পরিণত হবে। দীঘার এই নতুন জগন্নাথ মন্দির শুধু ধর্মীয় গন্তব্যই নয়, বাংলা ও ওড়িশার সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেবে।

আমাদের নিউজলেটার জন্য সাইন আপ করুন