তারিখ ১২ জুন, ২০২৫। সময়: রাত ১টা ৩৮ মিনিটের কিছু পর। গুজরাতের আমেদাবাদের মেঘানিনগরের আকাশে হঠাৎই ভেঙে পড়ল এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, ফ্লাইট নম্বর এআই১৭১। আমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশে টেকঅফের মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটে গেল এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ভারতের ইতিহাসে এটি অন্যতম ভয়ঙ্কর বিমান দুর্ঘটনা, যা কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব।
দুর্ঘটনার ভয়াবহতা
বিমানটির ধ্বংসাবশেষ মেঘানিনগরের বিজে মেডিক্যাল কলেজের একটি হস্টেলের উপর পড়ায় প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক পড়ুয়া। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় মোট ২৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে হস্টেলে মারা গেছেন ৩৩ জন। বিমানের একমাত্র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি ছাড়া সকল যাত্রী, ক্রু সদস্য এবং পাইলট এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
ব্ল্যাকবক্সের ক্ষতি: তথ্য উদ্ধারে চ্যালেঞ্জ
দুর্ঘটনার কারণ জানতে বিমানের ব্ল্যাকবক্স—যাতে ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর) থাকে—অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই যন্ত্রদ্বয় বিমানের সমস্ত তথ্য সংরক্ষণ করে, যা দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সহায়ক। তবে, ১৯ জুনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ব্ল্যাকবক্সটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে, এখানে তথ্য উদ্ধার কঠিন হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ব্ল্যাকবক্স থেকে তথ্য পুনরুদ্ধারের জন্য এটিকে আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি)-তে পাঠানো হতে পারে। তবে, এর জন্য প্রয়োজন কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন। অনুমোদন পেলেই ব্ল্যাকবক্সটি বিদেশের পথে রওনা দেবে।
কেন ঘটল এই দুর্ঘটনা?
দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা। যান্ত্রিক ত্রুটি, পাখির সঙ্গে ধাক্কা, নাশকতা, নাকি গাফিলতি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্ল্যাকবক্সের তথ্য অপরিহার্য। সাধারণত ব্ল্যাকবক্স অত্যন্ত টেকসই হয়, কিন্তু এই দুর্ঘটনার তীব্রতায় এটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা তদন্তে নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ করেছে।
এক নজরে দুর্ঘটনার তথ্য
- ফ্লাইট নম্বর: এআই১৭১, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার
- গন্তব্য: আমেদাবাদ থেকে লন্ডন (গ্যাটউইক)
- তারিখ ও সময়: ১২ জুন, ২০২৫; রাত ১টা ৩৮ মিনিটের পর
- মৃত্যু: ২৭৪ জন (বিমানে ২৪১ জন, হস্টেলে ৩৩ জন)
- বেঁচে যাওয়া: মাত্র ১ জন
- ব্ল্যাকবক্সের অবস্থা: ক্ষতিগ্রস্ত, তথ্য উদ্ধারে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি
সামনের পথ
এই দুর্ঘটনা শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ব্ল্যাকবক্সের তথ্য পুনরুদ্ধার হলেই জানা যাবে, কী কারণে এত বড় প্রাণহানি ঘটল। তবে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে না। এখন সবার চোখ কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন এবং আমেরিকায় ব্ল্যাকবক্স পাঠানোর দিকে।
এই মর্মান্তিক ঘটনা শোকের ছায়া ফেলেছে গোটা বিশ্বে। নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তদন্তে স্বচ্ছতা ও দ্রুততার প্রত্যাশা করছে দেশ।
