জেরুজালেম, ২০ জুন:
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইজরায়েল দাবি করেছে, ইরান থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্রে ক্লাস্টার বোমা সংযুক্ত ছিল। এই তথ্য সামনে আসতেই আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, সম্প্রতি তারা একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে থাকা ওয়ারহেড আকাশেই বিস্ফোরিত হয়ে বহু ক্ষুদ্র বোমা ছড়িয়ে দেয়।
টাইমস অফ ইজরায়েল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র মধ্য ইরান থেকে নিক্ষেপ করা হয় এবং এটি ৭ কিলোমিটার উচ্চতায় বিস্ফোরিত হয়। এর ফলস্বরূপ প্রায় ২০টি ছোট বোমা প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, এই বোমাগুলোর বেশ কয়েকটি বিস্ফোরিত না হলেও, সেগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছে।
বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করার অভিযোগ
ইজরায়েলি সেনা মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই বোমাগুলি কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর দিকে নির্দেশিত নয়, বরং বেসামরিক এলাকায় অন্ধভাবে পড়ে যাওয়ার মাধ্যমে জনজীবনে চরম বিপদের সম্ভাবনা তৈরি করে। এ ধরণের বোমা ভূমিমাইন হিসেবে কাজ করতে পারে, যা দীর্ঘদিন পরেও বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইজরায়েলি দূতাবাস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “এই ধরনের অস্ত্র আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে। ইরান ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক এলাকাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।”
কী এই ক্লাস্টার বোমা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্লাস্টার বোমা এমন এক বিস্ফোরক অস্ত্র, যা প্রধান বোমার ভিতরে বহু ছোট বিস্ফোরক বস্তু বহন করে। এগুলো আকাশে বিস্ফোরিত হয়ে ভূমিতে পড়ে ছড়িয়ে পড়ে, এবং স্পর্শ পেলেই বিস্ফোরিত হয়। সাধারণত কামানের গোলা, ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান বোমার মাধ্যমে এগুলো নিক্ষেপ করা হয়।
একটি মাত্র রকেট থেকেও শত শত সাবমিউনিশন ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই বোমাগুলো লক্ষ্য নির্ধারণে সক্ষম না হওয়ায় ব্যাপক এলাকা জুড়ে বেসামরিক প্রাণহানি এবং সম্পদের ক্ষতির ঝুঁকি বহন করে।
MIRV কৌশলের ইঙ্গিত
ইজরায়েলি সেনাবাহিনী মনে করছে, ইরান সম্ভবত MIRV (Multiple Independently Targetable Re-entry Vehicle) কৌশল প্রয়োগ করেছে। এই কৌশলের মাধ্যমে একটি মাত্র ক্ষেপণাস্ত্রে একাধিক ওয়ারহেড সংযুক্ত করা যায়, যা ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি এতদিন পর্যন্ত কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতো পরাশক্তিদের কাছেই সীমাবদ্ধ ছিল।
সেনা মুখপাত্রের মতে, এই কৌশল ইজরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’-কে ফাঁকি দিতে পারে, যা তাদের নিরাপত্তার জন্য এক গভীর আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ
এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সত্যিই ইরানের হাতে উন্নত ক্লাস্টার প্রযুক্তি এবং MIRV কৌশল থাকে, তবে তা গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
ইতোমধ্যেই জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ক্লাস্টার বোমার ব্যবহারকে নিন্দা জানিয়েছে এবং সকল পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

