তেহরান, তেল আভিভ ও ওয়াশিংটন, ২৫ জুন ২০২৫: ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের তীব্র সংঘাতের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আচমকা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন। তবে, এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা ও দোষারোপে শান্তির সম্ভাবনা ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ট্রাম্পের এই হঠাৎ ভোলবদলের পেছনে কি ইরানের আগ্রাসী প্রত্যাঘাত, নাকি অন্য কোনো কৌশল?
সোমবার রাতে কাতারে মার্কিন সেনাঘাঁটি আল উদেইদে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর মঙ্গলবার ভোরে (ভারতীয় সময়) ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা করেন, “ইরান ও ইজরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। দয়া করে কেউ এটি লঙ্ঘন করবেন না।” তিনি জানান, আগামী ছয় ঘণ্টার মধ্যে ইরান এবং ১২ ঘণ্টার মধ্যে ইজরায়েল তাদের সামরিক অভিযান বন্ধ করবে, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’-এর সমাপ্তি ঘটাবে।
এই ঘোষণার পেছনে তীব্র কূটনৈতিক তৎপরতা কাজ করেছে। হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গেছে, ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স, বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও এবং মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। ট্রাম্প ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করে বলেন, “বিবি, আমরা শান্তির পথে যাচ্ছি।” কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানির মধ্যস্থতায়ও ইরানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর চেষ্টা হয়।
ইজরায়েল জানায়, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি দূর করার লক্ষ্য পূরণের পর তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত। তবে, তেহরান লঙ্ঘন করলে কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেয় তারা। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ইজরায়েল হামলা বন্ধ করলে তারাও যুদ্ধবিরতি মানবে। কিন্তু, ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই ইরান ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যাতে বেরশেবায় চারজন নিহত হন। ইজরায়েলও পাল্টা হামলা চালায়।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আইআরআইএনএন দাবি করে, কাতারে হামলার পর ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির জন্য ‘মিনতি’ করেছেন। তেহরানের বিদেশমন্ত্রী আরাগচি স্পষ্ট করেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি এবং সিদ্ধান্ত নেবে ইরানের সামরিক বাহিনী।
ট্রাম্পের পূর্ববর্তী ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মতো এবারও প্রশ্ন উঠছে, এটি কি শান্তির জন্য, নাকি রাজনৈতিক কৌশল? নেদারল্যান্ডসে ন্যাটো সম্মেলনে যাওয়ার আগে ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ইজরায়েল ও ইরান উভয়েই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। বিশেষ করে ইজরায়েলের ভূমিকায় আমি হতাশ।”
ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে মার্কিন বি-২ বোমারু বিমানের হামলা এবং আয়াতুল্লাহ খামেনেইকে সরানোর হুমকির পর ইরানের কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়তো কূটনৈতিক চাপের ফল, তবে উভয় পক্ষের অবিশ্বাস ও পাল্টাপাল্টি হামলায় শান্তি এখনো অধরা।
পশ্চিম এশিয়ার এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, তা এখনো অনিশ্চিত। ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা কি শান্তি ফেরাবে, নাকি এটি কেবল একটি ক্ষণস্থায়ী নাটক? সময়ই এর উত্তর দেবে।

