নয়াদিল্লি, ২৩ জুন, ২০২৫: ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ, আর প্রাণ যায় উলুখাগড়ার’—এই প্রবাদই যেন এখন বিশ্ব পরিস্থিতির সত্যি চিত্র। ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের পর বিশ্ববাজারে তীব্র অস্থিরতা। পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনার পারদ চড়তে চড়তে জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে, আর শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। ভারতের সেনসেক্স ‘রেড জোনে’ ডুব দিয়েছে, সাধারণ মানুষের পকেটে পড়ছে চাপ।
তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি, বাজারে পতন
ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার খবরে বিশ্ববাজারে তোলপাড়। যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দাম ২.৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৭৫.৯৮ ডলারে পৌঁছেছে। ব্রেন্ট ক্রুড তেল ব্যারেল প্রতি ৭৯.১২ ডলারে ঠেকেছে, যা গতকাল ছিল ৭৭ ডলার। শেয়ার বাজারেও ধাক্কা। নাসডাক ফিউচারস ০.৭ শতাংশ কমেছে, জাপানের নিককেই সূচক ০.৬ শতাংশ আর সিওল ১.৪ শতাংশ পড়েছে। ভারতে সেনসেক্স ৭৫১ পয়েন্ট এবং নিফটি ২২৩ পয়েন্ট নিম্নগামী।
হরমুজ প্রণালী বন্ধের আতঙ্ক
ইরান দাবি করেছে, মার্কিন হামলায় তাদের কোনও বড় ক্ষতি হয়নি। কিন্তু ক্ষোভে ফুঁসছে তেহরান। ইরানের পার্লামেন্টে বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধের প্রস্তাব পাস হয়েছে। শুধু সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের অনুমোদন বাকি। এই জলপথ বন্ধ হলে বিশ্বের ২০ শতাংশ তেল ও গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হবে, তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৩০ ডলার ছুঁতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
ভারতের উপর ছায়া
ভারত তার ৮০ শতাংশ তেল মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করে। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে জ্বালানির দাম বাড়ার পাশাপাশি শিপিং খরচ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে রপ্তানি বাণিজ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, সংকটে পড়বে। সমুদ্রের তলদেশের ডেটা কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতিও ঝুঁকিতে।
আমজনতার কপালে দুশ্চিন্তা
জ্বালানির দাম বাড়লে পণ্যের মূল্য, পরিবহন, এবং উৎপাদন খরচ বাড়বে, ফলে মুদ্রাস্ফীতি আরও চড়বে। শেয়ার বাজারের পতনে বিনিয়োগকারীদের সঞ্চয়ে ধাক্কা। “যুক্তরাষ্ট্রের হামলার খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে,” বলছেন বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম।
কী করবে ভারত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের মজুত বাড়ানো এবং বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে মজুত বিনিময় চুক্তি এই সংকট মোকাবিলার পথ হতে পারে। বিশ্ব নেতাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই এখন এই ঝড় থামাতে পারে।

