নয়াদিল্লি, ২২ জুন, ২০২৫: আমেদাবাদে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনার পর থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার উপর যেন দুর্যোগের কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় কোথায় ত্রুটি ছিল, তা খুঁজে বের করতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে একের পর এক উড়ান বাতিলের জেরে যাত্রীদের ক্ষোভ চরমে। এই সংকটের মাঝেই ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) এয়ার ইন্ডিয়ার তিন শীর্ষ আধিকারিককে তৎক্ষণাৎ সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সংস্থার ডিভিশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট। বিমানকর্মীদের কাজের সময়সূচি নির্ধারণে গুরুতর গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে।
ডিজিসিএর তদন্তে উঠে এসেছে, কিছু ক্ষেত্রে পাইলটদের ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় ডিউটি দেওয়া হয়েছে, কোথাও আবার টানা কাজ করানো হয়েছে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না দিয়ে। এমনকী, লাইসেন্স ছাড়াও বিমানে ডিউটি দেওয়ার মতো গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। ডিজিসিএর নির্দেশের পর এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে এবং ১০ দিনের মধ্যে তার রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।
শুক্রবার ডিজিসিএ এই নির্দেশ জারি করে। অভিযুক্তরা হলেন—ডিভিশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট চূড়া সিং, চিফ ম্যানেজার (ডিওপিএস ক্রু শিডিউলিং) পিঙ্কি মিত্তল এবং ক্রু শিডিউলিং প্ল্যানিং বিভাগের পায়েল অরোরা। এঁরা বিমানকর্মীদের ডিউটি রোস্টার তৈরির দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে, এই কাজে বারবার গাফিলতি হয়েছে। ফলে, কর্মীদের কাজের সময়সূচিতে একাধিক অনিয়ম ধরা পড়েছে।
আমেদাবাদ দুর্ঘটনার কয়েকদিন আগেই ডিজিসিএ এয়ার ইন্ডিয়াকে সতর্ক করেছিল। নিরাপত্তা বিধি না মেনে তিনটি এয়ারবাসের উড়ান চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। এছাড়াও, গত ১৬ ও ১৭ মে বেঙ্গালুরু থেকে লন্ডনগামী দুটি উড়ানে পাইলটদের নির্ধারিত সময়ের বেশি কাজ করানো হয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে। এয়ার ইন্ডিয়া প্রাথমিকভাবে নিজেদের ভুল স্বীকার করলেও, ডিজিসিএর প্রশ্ন—জানা সত্ত্বেও কেন সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? উল্লেখ্য, এই উড়ানগুলি কোনও জরুরি কারণে চালানো হয়নি। তাহলে কেন পাইলট ও ক্রুদের ওভারটাইম করানো হল? এই বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার অ্যাকাউন্টেবল ম্যানেজারকে শোকজ নোটিস পাঠিয়েছে ডিজিসিএ।
নিয়ামক সংস্থার কড়া বার্তা—অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। অন্যথায়, এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমনকী সংস্থার উড়ানের অনুমতিও বাতিল হতে পারে। তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্ত আধিকারিকরা কোনও কাজের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
এই ঘটনা এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য বড় ধাক্কা। টাটা গ্রুপের অধীনে ২০২২ সালে সংস্থাটি নতুন করে পথ চলা শুরু করলেও, এই দুর্ঘটনা ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার উপর প্রশ্ন তুলেছে। এখন দেখার, তদন্তের পর কী পদক্ষেপ নেয় এয়ার ইন্ডিয়া, আর কীভাবে তারা যাত্রীদের ভরসা ফিরিয়ে আনে।

