নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর, ২৩ জুন ২০২৫
নদীয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভার উপ-নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী আলিফা আহমেদ ৪৯,৭৫৫ ভোটের বিশাল ব্যবধানে জয়ের পতাকা ওড়ালেন, বাবা প্রয়াত বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। ২০২১ সালে বাবার ৪৭,০০০ ভোটের মার্জিনকে ছাড়িয়ে আলিফার এই জয় কালীগঞ্জের মাটিতে তৃণমূলের অটুট শক্তির উজ্জ্বল প্রমাণ।
ভোটের মঞ্চে আলিফার দাপট
২৩ রাউন্ডের গণনায় আলিফা মোট ১,০২,১৭৯ ভোট পেয়ে শীর্ষে থেকেছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী আশিস ঘোষ পেয়েছেন ৫২,৪২৪ ভোট, আর বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী কাবিলউদ্দিন শেখের ঝুলিতে জমেছে ২৮,২৬২ ভোট। মোট ১,৮৫,৩৬৫ ভোট পড়ে, যা ৭২.৫% ভোটারের উৎসাহের সাক্ষ্য বহন করে। গণনার শুরু থেকেই আলিফা এগিয়ে ছিলেন। ১৯তম রাউন্ডে তাঁর লিড ৫১,৩৩৪ ভোটে পৌঁছেছিল, যদিও শেষ দুই রাউন্ডে বিজেপি কিছুটা ফিরে আসায় মার্জিন ৪৯,৭৫৫-এ স্থির হয়।
বাবার পথে কন্যার জয়যাত্রা
প্রয়াত নাসিরুদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এই আসনে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলিফার উপর ভরসা রেখেছিলেন। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য আলিফা বাবার আদর্শ আর দলের ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর মন্ত্রকে সামনে রেখে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন। তাঁর এই জয় শুধু রাজনৈতিক বিজয় নয়, কালীগঞ্জের মানুষের ভালোবাসা আর বিশ্বাসের প্রতিফলন।
ভোটের হিসেবে তৃণমূলের উত্থান, বিজেপির পতন
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল এই কেন্দ্রে ৩৩,০০০ ভোটে এগিয়ে ছিল। ২০২১-এর বিধানসভায় বিজেপি ৬৪,৭০৯ ভোট পেলেও এবার তাদের ভোট কমে ৫২,৪২৪-এ দাঁড়িয়েছে, ভোট শতাংশ ৩১% থেকে কমে ২৮%। তৃণমূলের ভোট শতাংশ ৫২% থেকে বেড়ে ৫৫% হয়েছে। বাম-কংগ্রেস জোটও ১২.৫% থেকে ১৫.৫% ভোটে কিছুটা এগিয়েছে। এই ফলাফল তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি ও জনপ্রিয়তার প্রতিফলন।
মমতার হৃদয়ছোঁয়া বার্তা
জয়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স-এ লিখেছেন, “কালীগঞ্জের মানুষ সব ধর্ম, জাতি, বর্ণের ঐক্য দিয়ে তৃণমূলকে আশীর্বাদ করেছেন। এই জয় মা-মাটি-মানুষের। আমি নাসিরুদ্দিন আহমেদকে স্মরণ করে এই বিজয় বাংলার জনগণকে উৎসর্গ করছি।” তিনি দলীয় কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রশংসা করে বলেন, “এই জয় তাঁদের প্রাণপণ প্রচেষ্টার ফল।”
২০২৬-এর আগে তৃণমূলের শক্তিপ্রদর্শন
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই জয় ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের আধিপত্যের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। কালীগঞ্জে ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ৪৫টি পঞ্চায়েত সমিতির ৩৮টি আসন তৃণমূলের দখলে থাকায় তাদের সাংগঠনিক কাঠামোর শক্তি ফুটে উঠেছে। বিজেপি ও বাম-কংগ্রেস জোটের তুলনায় তৃণমূলের প্রচার যুদ্ধে এগিয়ে ছিল।
শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, কিছু বিতর্ক
ভোটের দিন কিছু বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর থাকলেও, নির্বাচন কমিশনের ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তায় প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ছিল। বিরোধী দল কিছু বুথে এজেন্টদের বাধা ও ইভিএম ত্রুটির অভিযোগ তুললেও, তৃণমূল তা অস্বীকার করেছে।
নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব
আলিফা আহমেদের এই জয় কালীগঞ্জের মানুষের তৃণমূলের উপর অটল ভরসার প্রতীক। বাবার রাজনৈতিক আদর্শকে বুকে ধরে তিনি নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই ফলাফল রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূলের প্রভাব আরও গাঢ় করল, ২০২৬-এর দিকে তাদের পথচলাকে আরও দৃঢ় করল।

