কালীগঞ্জ, ২৫ জুন ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কালীগঞ্জ থানার মোলান্দি গ্রামে বোমাবাজির ঘটনায় নাবালিকা তমান্না খাতুনের মৃত্যুর ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃত ব্যক্তির নাম সারিফুল শেখ, যিনি এই ঘটনায় অভিযুক্ত আনোয়ার শেখের ছেলে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোলান্দির শেখপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার সারিফুলকে কৃষ্ণনগর আদালতে পেশ করা হবে এবং পুলিশ তাকে সাত দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করতে পারে। এই গ্রেপ্তারির মধ্য দিয়ে এ ঘটনায় মোট ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচজন। এর আগে পুলিশ আনোয়ার শেখ, মানোয়ার শেখ, কালু শেখ এবং আদর আলি শেখকে গ্রেপ্তার করেছিল।
ঘটনার সূত্রপাত গত সোমবার, যখন কালীগঞ্জে উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। জয়ের উল্লাসে দলের কর্মীরা মোলান্দি গ্রামে বিজয় মিছিল বের করেন। অভিযোগ, এই মিছিলের সময় কয়েকজন গ্রামবাসীর বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই বোমার আঘাতে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তমান্না খাতুন (১০) ঘটনাস্থলেই মারা যান। এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তমান্নার পরিবার তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের এই হত্যার জন্য দায়ী করেছে।
ঘটনার তীব্রতা উপলব্ধি করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশের ১২ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ প্রথম চারজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার তাদের কৃষ্ণনগর আদালতে পেশ করা হলে মানোয়ার শেখ ও কালু শেখের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর হয়, এবং আনোয়ার শেখ ও আদর আলি শেখের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মোলান্দি গ্রামে এখনো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একাধিক বাড়ির দেওয়ালে বোমার আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে এবং চাপা উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস তাদের বিজয় উৎসবের সব কর্মসূচি বাতিল করেছে। তবে, স্থানীয় বাসিন্দারা তমান্নার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এবং অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন।
এই ঘটনায় সিপিআই(এম) পক্ষ থেকে জলপাইগুড়িতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে, যেখানে তারা অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং আরও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে।
এই ঘটনা কালীগঞ্জে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সহিংসতার একটি মর্মান্তিক পরিণতি। তমান্নার মৃত্যু রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তৃণমূলের বিজয় উৎসবে বোমাবাজির অভিযোগ এবং এর ফলে এক নিরীহ শিশুর মৃত্যু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দায়-দায়িত্বের প্রশ্ন তুলেছে। পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ এবং মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হলেও, স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ এবং শোক কমার কোনো লক্ষণ নেই।

