দীঘার জগন্নাথ মন্দিরে বুধবার বিকেলে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ সস্ত্রীক পুজো দিয়ে বেরিয়ে এসে বললেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে ভগবান একটা ভালো কাজ করিয়েছেন।” তাঁর এই মন্তব্যে সায় দিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। কিন্তু এই ঘটনায় বঙ্গ রাজনীতিতে তুফান উঠেছে, আর গেরুয়া শিবিরে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে।
অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্য লগ্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন করেন। এই আয়োজনে হিডকোর ভাইস চেয়ারম্যান হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে হাজির হন দিলীপ ঘোষ। তাঁর আগমনে মন্দির চত্বরে উৎসবের আমেজ। ভক্তদের ‘জয় জগন্নাথ’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। ভিড় ঠেলে স্ত্রী রিঙ্কুদেবীর সঙ্গে মন্দিরে প্রবেশ করেন দিলীপবাবু। পুজো শেষে ভক্তরা তাঁদের গলায় মালা পরিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। দিলীপবাবুও ‘জয় জগন্নাথ’ ধ্বনিতে যোগ দেন। এরপর তাঁকে অতিথি নিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীসহ প্রশাসনিক কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভক্তদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আজ আপনারা ভগবানের মন্দিরে এসেছেন। সকলে আনন্দ করুন।”
কিন্তু এই ঘটনা বিজেপির অন্দরে ঝড় তুলেছে। দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ দলীয় নেতারা। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার স্পষ্ট জানিয়েছেন, দল শুরু থেকেই এই উদ্বোধনে যাওয়ার বিরোধিতা করেছে। তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদ থেকে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে সনাতনী হিন্দুদের উপর আক্রমণ চলছে। এই আবহে আমরা এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনে যাওয়ার বিরুদ্ধে ছিলাম।” এমনকী, দলের সংখ্যালঘু মোর্চার প্রাক্তন পদাধিকারী সামসুর রহমান দিলীপের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডার কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।
এদিন কাঁথিতে সনাতনী সম্মেলনের ডাক থাকলেও, সেখানে না গিয়ে সড়কপথে কাঁথির উপর দিয়ে সোজা দীঘায় পৌঁছে যান দিলীপবাবু। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তিনি বলেন, “আমি রাজনীতি করতে আসিনি। ভগবান দর্শন করতে এসেছি।” কিন্তু তাঁর এই পদক্ষেপ কি শুধুই ভক্তির টান, নাকি রাজনৈতিক হাওয়া বদলের ইঙ্গিত? দীঘার এই ঘটনা বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের জন্ম দেবে কি?

