সৈকতনগরী দীঘায় প্রভু জগন্নাথদেবের নব আলয়ের দ্বারোদ্ঘাটনের প্রাক্কালে আজ, মঙ্গলবার, এক মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একশো কুইন্টাল আম ও বেলকাঠ এবং দুই কুইন্টাল ঘি দিয়ে এই অখণ্ড হোমযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে। বিকেলে মাহেন্দ্রক্ষণে পুণ্যাহুতি পর্বের মধ্য দিয়ে এই মহাযজ্ঞের সমাপ্তি ঘটবে, যা ঘিরে হাজার হাজার ভক্তের মধ্যে তুমুল উন্মাদনা ছড়িয়েছে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য, আমলা, বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
দীঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের বিশ একর জমিতে ২০২২ সালে অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ দিনে প্রভু জগন্নাথের নতুন আলয়ের নির্মাণ শুরু হয়েছিল। তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর, আগামীকাল বুধবার, বঙ্গোপসাগরের তীরে দীঘার সমুদ্রতটে মহাপ্রভুর প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও নব আবাসের দ্বারোদ্ঘাটন হতে চলেছে। গোটা বাংলা এই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
গত ২৫ এপ্রিল থেকে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। শ্রীধাম পুরী থেকে আগত সাতান্ন জন সেবক এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ইসকনের সতেরো জন সন্ন্যাসীর তত্ত্বাবধানে এই আচার পরিচালিত হচ্ছে। মন্দির প্রাঙ্গণে খড় ও হোগলার আচ্ছাদনে নির্মিত মহাকুণ্ডের চারপাশে আরও চারটি ছোট কুণ্ডে অখণ্ড হোম চলছে। সঙ্গে নরসিংহ মন্ত্রের এক কোটি বার পাঠ করছেন প্রভুর সেবকরা। পুরীর রাজেশ দয়িতাপতি এই পর্বের দায়িত্বে রয়েছেন। মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাসের পরিচালনায় আরেকটি হোমকুণ্ড জ্বলছে। গর্ভগৃহে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবতাদের আহ্বান, পিঁড়ির পুজো এবং দুধস্নানের পর্ব সম্পন্ন হয়েছে।
প্রভু জগন্নাথ, বলরাম, দেবী সুভদ্রার পাশাপাশি এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত হবেন সুদর্শন দেব, দেবী লক্ষ্মী, বিমলা ও সত্যভামা। পুরীধামের ঐতিহ্য অনুসরণ করে দীঘার এই মন্দির এক আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় এই ধর্মীয় উত্তরণ সম্ভব হয়েছে। সোমবার কলকাতা থেকে দীঘায় পৌঁছে তিনি মন্দির প্রাঙ্গণে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন এবং ভক্তদের সুবিধার জন্য নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় আলোকসজ্জায় ঝলমলে মন্দির ও আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করে তিনি বলেন, আধ্যাত্মিকতা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠেছে দীঘা। এই জগন্নাথ মন্দির ধর্মীয় ভাবাবেগ, শান্তি ও সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন হয়ে হাজার বছর ধরে থাকবে।
শ্রীধাম পুরী থেকে তিনশো পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত দীঘা এখন শুধু পর্যটন নগরী নয়, এক আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবেও নিজের পরিচয় তৈরি করছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে মাইকে মন্ত্রোচ্চারণ আর ভক্তদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় দীঘা এক অনন্য মাত্রা পেয়েছে। এই নতুন জগন্নাথ মন্দির বাংলার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক নতুন অধ্যায় রচনা করতে চলেছে।

