বৈভব সূর্যবংশীর নাম এখন ক্রিকেট জগতের উঠতি নক্ষত্র। মাত্র ১৪ বছর ৩২ দিন বয়সে আইপিএলের মঞ্চে শতরানের ঝড় তুলে তিনি গড়েছেন ইতিহাস। সমস্তপুরের এই কিশোর শুধু আইপিএল নয়, টি-২০ ক্রিকেটেরই কনিষ্ঠতম শতকের মালিক এখন। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে মাত্র ৩৫ বলে তিন অঙ্কের মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলেন বৈভব, যা ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম এবং আইপিএলে ক্রিস গেইলের পর দ্বিতীয় দ্রুততম শতক। তাঁর ব্যাটিং বিক্রমে মুগ্ধ গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। শন পোলক, ইয়ান বিশপের মতো ক্রিকেট বিশ্লেষকদের প্রশংসার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মাটিতেও ছড়িয়েছে বৈভবের নামের জয়গান।

কিন্তু এই উচ্ছ্বাসের মাঝেও উড়ে এসেছে কটাক্ষের তির। বৈভবের বয়স নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। এ নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। গত বছর ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে এমার্জিং এশিয়া কাপ খেলার সময়ও পাকিস্তানের প্রাক্তন পেসার জুনেইদ খান তাঁর বয়স নিয়ে কথা তুলেছিলেন। জবাবে বৈভবের বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশী জানিয়েছিলেন, তাঁর ছেলে আট বছর বয়সেই বিসিসিআই-অনুমোদিত অস্থিমজ্জার পরীক্ষা করিয়েছে। সেই রিপোর্টও প্রকাশ্যে এনেছিলেন তিনি। তবুও বৈভবের বয়স নিয়ে আঙুল তোলায় ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা দেখছেন ঈর্ষার ছায়া, বিশেষ করে পড়শি দেশ থেকে উঠে আসা সমালোচনায়।

বয়স নিয়ে বিতর্ক ভারতীয় ক্রিকেটে অচেনা নয়। অতীতে মনজ্যোত কালরার মতো সম্ভাবনাময় প্রতিভাও এই বিতর্কে জড়িয়ে ক্যারিয়ারের অন্ধকারে হারিয়ে গেছেন। ২০১৮ সালে পৃথ্বী শ, শুভমান গিলের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন মনজ্যোত। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অপরাজিত ১০১ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে হয়েছিলেন ম্যাচের সেরা। কিন্তু বয়সে কারচুপির অভিযোগে তাঁর ক্যারিয়ারে নেমে আসে ছায়া। ওম্বুডসম্যান জাস্টিস (অব.) বি ডি আহমেদ তাঁকে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে দুই বছর এবং সিনিয়র টুর্নামেন্ট থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেন। দিল্লি ক্যাপিটালসের স্কোয়াডে জায়গা পাওয়া মনজ্যোত আর বাইশ গজে ফিরতে পারেননি। ক্রিকেট ছেড়ে ইউটিউবকে পেশা বানিয়েছেন তিনি। তাঁর ৪২ হাজার সাবস্ক্রাইবারের চ্যানেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি কিংবা আইপিএল নিয়ে ভিডিও বেশ জনপ্রিয়। তিনি জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও মুম্বইয়ে অনুশীলনের সময় পিঠের চোট তাঁর ক্রিকেটে ফেরার পথ রুদ্ধ করেছে।
বৈভবের গল্প কিন্তু এখনও উজ্জ্বল। তাঁর ব্যাট থেকে ঝরছে রানের ফোয়ারা, আর ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা স্বপ্ন দেখছেন এক নতুন যুগের। বিতর্কের কাঁটা পেরিয়ে এই কিশোর যে নিজের প্রতিভার জোরে বিশ্বজয়ের পথে এগিয়ে চলেছে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

