Hot News
- Advertisement -
Ad imageAd image

ভারতীয় ও বার্মা প্লেটের সংঘাত, মায়ানমার-থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পের নেপথ্যে ‘গ্রেট নাইফ কাট’

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভূগর্ভস্থ ভারতীয় এবং সুন্ডা (বার্মা) প্লেটের সংঘাতে সৃষ্টি হওয়া ‘সাগাইং চ্যুতি’ বা ‘ফল্ট’ ছিল শুক্রবার দুপুরের তীব্র ভূমিকম্পের উৎস। ভূবিজ্ঞানীরা এটাকে ‘গ্রেট নাইফ কাট’ও বলে থাকেন। রিখটার স্কেলে ৭ এর বেশি মাত্রার এই বিধ্বংসী ভূমিকম্পটি মায়ানমার, থাইল‌্যা঩ন্ডের সঙ্গে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা কাঁপিয়ে দিয়েছে। ভূতাত্বিকরা জানিয়েছেন, মায়ানমারে উত্তর-দক্ষিণ বিস্তৃত এই ফল্টটি রয়েছে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে। যার একটা বড় অংশ হল ইরাবতী নদীর অববাহিকা। জিএসআই’এর অবসরপ্রাপ্ত ডিরেক্টর ভূতাত্বিক শিখেন্দ্র দে জানিয়েছেন, ভারত-মায়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত সাগাইং ফল্টের অস্তিত্ব রয়েছে। বড় ধরনের ভূমিকম্পের উৎসস্থল হল এটি। অতীতে এখান থেকে একাধিক বিধ্বংসী তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রভাব মায়ানমার ছাড়াও উত্তর পূর্ব ভারতে পড়েছে।
ভূগর্ভস্থ দুটি প্লেটের সংঘাতে সৃষ্টি হওয়া ফল্ট থেকে যে ভূমিকম্পগুলি হয়, তার তীব্রতার মাত্রা বেশি হওয়ার প্রবণতা অধিক থাকে। ভারত ও নেপালে হিমালয় এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প সৃষ্টি হওয়ার কারন ভারতীয় ও ইউরেশিয়ান প্লেটের নিরন্তর সংঘাত। একটি প্লেটের মধ্যে সংঘাতের জেরে যে ফল্টগুলি তৈরি হয়, সেখান থেকেও ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। কিন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার তীব্রতা তুলনামূলকভাবে কম হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূগর্ভে এরকম বহু ফল্ট রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও তা আছে। কিছুদিন আগে দিল্লি সংলগ্ন একটি জায়গায় এই ধরনের ফল্ট থেকে মাঝারি মাত্রার (রিখটর স্কেলে ৫ এর বেশি) ভূমিকম্প হয়েছিল।
ভূতাত্বিকরা বলছেন, দুটি প্লেটের মধ্যে সংঘাত হলে, একটি অন্যটির উপর উঠে পড়তে থাকে। আবার পাশাপাশি অবস্থান করেও সংঘাত চলে। শিখেন্দ্রবাবু জানিয়েছেন, শুক্রবার মায়ানামারের মান্দালয় শহরের কাছে যে ভূমিকম্পটির উৎসস্থল, সেটি মূলত হয়েছে ভারতীয় ও সুন্দা প্লেটের পাশাপাশি থাকা অবস্থায় চলা সংঘাতের ফলে (স্ট্রাইক স্লিপ ফল্ট)। ৭.৭ থেকে ৬.৪ মাত্রার একাধিক ভূমিকম্প হয়েছে কয়েক ঘন্টার মধ্যে। তারপর ৪ মাত্রার বেশি একাধিক ‘আফটারশক’ অনুভূত হয়েছে। ভূতাত্বিকরা বলছেন, সাগাইং ফল্ট বরাবর দুটি প্লেটের পাশাপাশি সংঘাত প্রক্রিয়া বেশ দ্রুত গতিতে চলে। দুটি প্লেটের এভাবে সংঘাত চলার আনুমানিক অগ্রগতি থাকে বছরে ১১ থেকে ১৮ মিলিমিটার। এক্ষেত্রে এটা যথেষ্টই বেশি বলে ভতাত্বিকরা মনে করছেন। নিরন্তর এই সংঘাতের ফলে যে শক্তি বেরিয়ে আসছে, তা পুঞ্জীভূত হয়ে কখনও সখনও শক্তিশালী ভূমিকম্পের সৃষ্টি হচ্ছে এই এলাকায়। ভূতাত্ত্বিকরা বলছেন, ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প নিয়মিত হওয়ার জেরে বেশি তীব্রতার ভূমিকম্প অধিক সংখ্যায় হওয়াকে বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ দুটি প্লেটের সংঘাতের থেকে যে শক্তি নিয়মিত বের হতে থাকে, তা ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। কিন্তু কখনও সখনও বড় ভূমিকম্প হয়ে যায়। সেটা কবে হবে, তা বিশেষজ্ঞরা আগাম জানেন না।

আমাদের নিউজলেটার জন্য সাইন আপ করুন