সম্প্রতি, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায়ে স্পষ্ট করেছে যে, বিধানসভায় পাস হওয়া কোনও বিল রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি দীর্ঘদিন আটকে রাখতে পারবেন না। এই রায় তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবির বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে এসেছে, যিনি দশটি গুরুত্বপূর্ণ বিল অনুমোদন না করে আটকে রেখেছিলেন। এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট তীব্র সমালোচনা করে রাজ্যপালকে তিন মাসের মধ্যে বিলগুলির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এবার, এই রায়কে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে, সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতির জন্যও একই ধরনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, রাজ্যপালের পাঠানো কোনও বিল রাষ্ট্রপতি ভবনে দীর্ঘদিন মুলতুবি রাখা যাবে না। তিন মাসের মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে বিলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। আইনজীবী মহলের মতে, এ ধরনের রায় সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে এই প্রথম।
তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের বিরুদ্ধে দায়ের মামলার রায় গত ৮ এপ্রিল ঘোষণা করা হলেও, আদালতের বিস্তারিত আদেশ প্রকাশিত হয়েছে শুক্রবার। বিচারপতি জি বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই রায়ে বলেছে, সংবিধানের ২০১ অনুচ্ছেদের অধীনে রাষ্ট্রপতি যে দায়িত্ব পালন করেন, তা জুডিশিয়াল রিভিউয়ের আওতায় পড়ে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের বৈধতা আদালতের দ্বারা যাচাই করা যেতে পারে।
এ ছাড়া, সুপ্রিম কোর্ট আরও জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির কোনও বিলে ‘পকেট ভেটো’ প্রয়োগের অধিকার নেই। অর্থাৎ, কোনও বিলকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা যাবে না। রাষ্ট্রপতিকে বিলটি হয় অনুমোদন করতে হবে, নয়তো খারিজ করতে হবে, এবং এই সিদ্ধান্ত তিন মাসের মধ্যে জানাতে হবে। এই রায় শুধুমাত্র সাংবিধানিক দায়িত্বের ক্ষেত্রেই নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেও স্বচ্ছ ও দ্রুততর করার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের মর্যাদা এবং বিধানসভার আইন প্রণয়নের ক্ষমতাকে আরও সুসংহত করেছে। এটি নিশ্চিত করে যে, জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা পাস হওয়া বিলগুলি অযথা বিলম্বের শিকার হবে না। আইনজীবী ও সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ এবং ‘পথপ্রদর্শক’ হিসেবে অভিহিত করছেন, যা ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।