ঢাকা, ৩ জুলাই ২০২৫: সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় বাংলাদেশ পুলিশ চার্জশিট দাখিল করেছে। গত ১ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর আদালতে জমা পড়া এই চার্জশিটে চিন্ময়কৃষ্ণকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে আরও ৩৭ জনের নাম রয়েছে, যার মধ্যে ২০ জন গ্রেপ্তার ও ১৮ জন পলাতক। তবে, পুলিশ হেফাজতে থাকা চিন্ময়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময়কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। পরদিন, ২৬ নভেম্বর, চট্টগ্রাম আদালতে তাঁর জামিন আবেদন নাকচ হলে পুলিশ তাঁকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এই সংঘর্ষে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম কুপিয়ে ও পিটিয়ে নিহত হন। পুলিশের দাবি, চিন্ময়ের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
চার্জশিটে পুলিশ জানিয়েছে, চিন্ময়ের বক্তব্য সমর্থকদের হিংসাত্মক আচরণে উস্কানি দিয়েছে, যা সাইফুলের মৃত্যুর জন্য দায়ী। তবে, ঘটনার সময় তিনি পুলিশ হেফাজতে প্রিজন ভ্যানে ছিলেন, যা তাঁর সরাসরি জড়িত থাকার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, যার মধ্যে ২১ জনকে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চিন্ময়ের সমর্থকরা এই চার্জশিটকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তারা বলছেন, পুলিশ হেফাজতে থাকা একজন ব্যক্তি কীভাবে হত্যার জন্য উস্কানি দিতে পারেন? সমালোচকরা মনে করছেন, এটি চিন্ময়কে দীর্ঘ সময় জেলে আটকে রাখার কৌশল। এছাড়া, তাঁর পক্ষে আইনজীবীদের দাঁড়াতে না পারা এবং জামিন শুনানি বারবার স্থগিত হওয়া আইনি প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পরবর্তী শুনানির তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২৬ নির্ধারিত হয়েছে।
চিন্ময়কৃষ্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর গ্রেপ্তার ও এই মামলা ভারতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতিশ্রুতি দিলেও, এই ঘটনা উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
আইনজীবী হত্যা মামলায় চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে চার্জশিট বাংলাদেশের আইনি ও সামাজিক পরিস্থিতির জહুমতি জটিলতাকে তুলে ধরেছে। তাঁর সমর্থকদের দাবি, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। পুলিশের অভিযোগ তাঁর উস্কানির ওপর নির্ভরশীল হলেও, সরাসরি প্রমাণের অভাব বিতর্ক তৈরি করেছে। ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করতে আইনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা অত্যন্ত জরুরি। এই ঘটনা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও আইনের শাসন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

